ঢাকা,শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

বালুখালী নতুন বস্তিতে আসছে রোহিঙ্গা: বাড়ছে বস্তির আয়তন

উখিয়া প্রতিনিধি  :::ukia--

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী পুলিশ ও রাখাইন সম্প্রদায়ের নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা বিপুল পরিমান রোহিঙ্গা নিয়ে বানিজ্যের পর বানিজ্যে মেতে উঠেছে এক শ্রেণির স্থানীয় দালাল সিন্ডিকেট। রোহিঙ্গারা এসব প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। উখিয়া উপজেলায় অনিয়ন্ত্রিত কুতুপালং থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে পাশ^বর্তী বালুখালী এলাকায় শত শত একর সরকারী বনভূমি দখল করে নতুন বস্তি নির্মাণ করে যাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী মেম্বার নুরুল আবছারের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট। ইয়াবা ব্যবসায়ীদের টাকা নিয়ে গড়া উঠা এ বস্তিতে ইতিমধ্যে ১০ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। সরকারের কোন বাহিনীর নিয়ন্ত্রন না থাকায় এখানে বসবাস করা রোহিঙ্গাদের নিয়ে শংকিত অবস্থায় দিনানিপাত করছে এলাকাবাসী। প্রতিদিনই বালুখালী বস্তিতে ১০/১২টি পরিবার করে রোহিঙ্গা ঢুকছে বলে স্থানীয়রা জানান। এতে বন সম্পদ ধ্বংসের পাশপাশি বস্তির আয়তন বৃদ্ধি ও আইনশংখলা পরিস্থিতির অবনতির আশংকা করছেন সচেতন মহল।

গতকাল শূক্রবার সরজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, উখিয়া উপজেলার বালুখালী বনবিটের অধিনে বনবিভাগের বিশাল জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে রোহিঙ্গা বস্তি। যাতে ১০ হাজারেরও অধিক রোহিঙ্গা বসতি স্থাপন করে বসবাস করছে। প্রতিদিনই এ বস্তিতে নতুনভাবে যুক্ত হচ্ছে রোহিঙ্গারা। চলছে বনভুমি দখল ও বস্তি নির্মান কাজ। স্থানীয় বালুখালী গ্রামের প্রবীন বাসিন্ধা রওশন আলী (৬০) জানান, কুতুপালং এলাকায় বস্তি ও শরনার্থী শিবির থাকার পরও বালুখালীতে নতুন ভাবে বস্তি সৃষ্টিতে আবছার মেম্বারের ভুমিকা আছে। সামাজিক বনায়নের বিপুল পরিমান গাছগাছালী কেটে এ বস্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। অনিয়ন্ত্রিত বিপুল পরিমান এ রোহিঙ্গার কারনে এলাকার পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হচ্ছে বলেও তিনি মনে করেন। স্থানীয় আরো বেশ কয়েকজন ব্যাক্তি তার সাথে সুর মিলিয়ে বলেন, প্রায় প্রতিদিন নতুন গড়ে উঠা বালুখালী বস্তিতে নিয়মিত ভাবে রোহিঙ্গা পরিবার ঢুকছে। এ বস্তি নিয়ন্ত্রন করছেন আবছার মেম্বার। প্রতিদিনই কোন না কোন সংগঠন এ বস্তিতে অনুমতি বিহীন ত্রান বিতরন করে যাচ্ছে বলেও তারা জানান। ইতিমধ্যে বালুখালী বস্তিতে একাধিক রোহিঙ্গা যুবতী ধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে। কিন্ত এসব ঘটনা চাপা পড়ে যাচ্ছে বালুখালী বস্তিতে কোন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী না থাকার কারনে। তাই স্থানীয়রা মনে করেন, বালুখালীর নির্জন জঙ্গলে বস্তিতে রোহিঙ্গারা নির্যাতনের শিকার হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় জনগনও শংকিত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। বালুখালী রোহিঙ্গা বস্তি সৃষ্টিতে স্থানীয় ইয়াবা ব্যবসায়ীরা সম্পৃক্ত থাকায় এ আশংকা আরো বেড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিন্থিত ইয়াবা ব্যবসায়ী এনামুল হক, ইমাম হোসেন সহ বেশ কয়েকজন ইয়াবা ব্যবসায়ীর অর্থয়ানে মেম্বার নুরুল আবছার বালুখালীতে রোহিঙ্গা বস্তি নির্মানে বিপুল পরিমান টাকা ব্যায় করে যাচ্ছেন। নির্মানকৃত এসব বস্তিতে রোহিঙ্গাদের ফ্রি থাকাসহ খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ফ্রি থাকা খাওয়া সহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা মিয়ানমারের প্রচার পাওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে আবারো ব্যাপক হারে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটছে। সীমান্তে নিয়োগ করা দালাল মারফত বালুখালী রোহিঙ্গা বস্তিতে রোহিঙ্গাদের সমাগম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। স্থানীয় জনগনের ভাষায় বস্তি নির্মানের উদ্দেশ্যে একটাই সীমান্ত লাগোয়া রোহিঙ্গা বস্তিতে ইয়াবার মজুদ গড়ে তোলা এবং রোহিঙ্গাদের দিয়ে তা দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করা। স্থানীয় জাফর ইকবাল অভিযোগ করে বলেন, তার জায়গা সহ বেশকিছু জায়গায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয়  দিচ্ছে মেম্বার আবছারসহ তার লোকজন। নতুন আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে এভাবে বস্তি গড়ে তুললেও প্রসাশন এ ব্যাপারে নিরব ভুমিকা পালন করছে।ফলে প্রসাশনের ভুমিকা নিয়ে স্থানীয় জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বালুখালীতে রোহিঙ্গা বস্তি সৃষ্টিকে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির জন্য মারাত্বক হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন,এ ব্যাপারে আমি আমার বক্তব্য উপজেলা  পরিষদের আইনশৃংখলা বিষয়ক সমন্বয় সভায় যা বলার বলেছি। উখিয়া রেজ্ঞ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন,বনবিভাগের বিশাল এলাকা রোহিঙ্গাদের দখলে চলে গেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রশয় দেওয়ার ফলে রোহিঙ্গারা বেপরোয়া হয়ে গেছে।ইতিমধ্যে  বস্তি উচ্ছেদ করতে বনকর্মীদের উপর হামলা করেছে রোহিঙ্গারা। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের ইন্ধন ছাড়া রোহিঙ্গাদের এত সাহস নেই যে সরকারী লোকজনের উপর হামলা করার।

পাঠকের মতামত: